
হাসিনাকে ফুলস্টপ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার
- আপলোড সময় : ১১-০২-২০২৫ ০৪:১৪:১৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০২-২০২৫ ০৪:২০:৪০ অপরাহ্ন


* ওমানের রাজধানী মাস্কটে তৌহিদ হোসেন ও জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক * হাসিনাকে ‘ফুলস্টপ’ করাতে ভারতকে বার্তা দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কিছুদিন তার কোনো ‘সাড়া শব্দ’ পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনি কোথায় আছেন সেটিও বেশ গোপন রাখে নয়াদিল্লি। তবে সম্প্রতি ভারতে বসে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কথা বলেন তিনি। এ নিয়ে দেশে নতুন করে তৈরি হয় উত্তেজনা। ওইদিন রাতেই ক্ষোভে সাধারণ মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেন। এছাড়া তার এই বক্তব্যের পর ঢাকা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারতের দূতদের তলব-পাল্টা তলবের মুখে পড়তে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী সপ্তাহে ওমানের রাজধানী মাস্কটে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এ বৈঠকে এস জয়শঙ্করকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আহ্বান জানাবেন, ভারতে বসে হাসিনা যেন কোনো বক্তব্য না দেন এবং দেশকে অস্থিতিশীল না করেন। তিনি মূলত শেখ হাসিনাকে ‘ফুলস্টপ’ করানোর বার্তা দেবেন। কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানের মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্স হবে। সেখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দেবেন। কনফারেন্সের ফাঁকে দুজন বৈঠকে বসবেন। উভয়পক্ষ এ বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশে ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিবেশ তৈরি করে। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটাই শীতল হয়। তার এ সফরের পর গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ভারতীয় জেলে ও ভারত বাংলাদেশি জেলেদের মুক্তি দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠায়। ওই সময় ১৮৫ জন মুক্তি পান। এছাড়া দুই দেশই জেলেদের আটককৃত নৌযানও ফেরত দেয়। তবে এই ‘শীতল সম্পর্ক’ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আবার দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। সে সময় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশ। এর ২৪ ঘন্টা না যেতে ভারতও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার নুরাল ইসলামকে তলব করে। সেগুলোর রেশ কাটতে না কাটতেই আসে শেখ হাসিনার বক্তব্য ইস্যু। হাসিনার বক্তব্যের কারণে দেশে নতুন করে আবারও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে এমনটি জানিয়ে ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। এরপর বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে? দিল্লি। বাংলাদেশে ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিবেশ তৈরি করে। শুধু এতে থেমে থাকেনি ভারত। তারা শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়। কিন্তু নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের এমন প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে নেয়নি ঢাকা। এর জবাবে বাংলাদেশের কথা, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্য ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনাকাক্সিক্ষত’। এ বিষয়ে কথা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র রফিকুল আলম এর সঙ্গে। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করছেন, যা বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেই বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এরইমধ্যে অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ বিষয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি মন্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্য প্রদান অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাক্সিক্ষত। আমরা প্রতিবেশী দেশটিতে নানা ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি হতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো বক্তব্য প্রদান করে না। অন্যদের কাছ থেকেও বাংলাদেশ একই ধরনের ব্যবহার প্রত্যাশা করে। দেশের অপর একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, শেখ হাসিনাকে থামানোর পাশাপাশি প্রত্যার্পন চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত দিতেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানাতে পারেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এছাড়া তাদের মধ্যে সীমান্ত, ভিসা, তিস্তা, গঙ্গা চুক্তির নবায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলবের পর সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি, শেখ হাসিনাকে সংযত করার জন্য। আমরা বলেছি, ওনি যেন বক্তব্য না দেন, যেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছে। আমরা এটার কোনো জবাব পাইনি এখনও। গত কয়েকদিনের কার্যকলাপের কারণে আমরা আরেকবার ভারতকে প্রতিবাদ নোট দিয়েছি। শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়ে দেশে এক ধরনের অস্থিশীলতা উসকে দিচ্ছেন। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে স্থানীয় কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, হাসিনার পতনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউেইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে তৌহিদ-জয়শঙ্করের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। ওমানের মাস্কটে হবে তাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে মোটেই ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো বন্ধে আহ্বান জানাবে ঢাকা। পাশাপাশি ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা যেন বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে তার আহ্বান জানানো হবে। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, সেই বার্তাই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। মাস্কটে ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্সের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার। এছাড়া, কনফারেন্সে যোগ দেয়া আরও কিছু দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ